কৃষিকাজের ইতিহাস বলতে শস্য উৎপাদন ও প্রাণী পালন বিষয়সমূহ এবং এর উন্নয়ন ও ব্যপ্তির লিপিবদ্ধকরণকে বুঝানো হয়। কৃষিকাজ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনভাবে শুরু হয় এবং বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রাচীন ও আধুনিক বিশ্বের কমপক্ষে ১১টি অঞ্চলকে কৃষিকাজের স্বাধীন উৎপত্তির স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
খ্রিস্টপূর্ব ২০,০০০ অব্দ থেকে মানুষ বন্য শস্যাদি খেয়ে আসছে। খ্রিস্টপূর্ব ৯৫০০ অব্দ সময়কালে লেভ্যান্ট-এ আটটি নব্য প্রস্তর যুগীয় প্রতিষ্ঠাকালীন শস্য, এমার গম ও এইনকর্ন গম, যব, মটরশুঁটি, ডাল, তিক্ত ছোলা, ছোলা, তিসি চাষ হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১১,৫০০ থেকে ৬২০০ অব্দের মধ্যে চীনে ধান উৎপাদন শুরুর পরে মুং শিম, সয়াবিন ও আজুকি শিম উৎপাদন শুরু হয়। মেসোপটেমিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ১৩,০০০ অব্দে শূকর পালন শুরু হয় এবং পরে খ্রিস্টপূর্ব ১১,০০০ থেকে ৯০০০ অব্দের মধ্যে ভেড়া পালন শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৮৫০০ অব্দের দিকে বর্তমান তুরস্ক ও পাকিস্তানে বন্য অরোচ সম্প্রদায় গবাদি পশু পালন শুরু করে।[১]আখ ও অন্যান্য মূলীয় শাকসবজি চাষ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দে নিউ গিনিতে। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ থেকে ৫০০০ অব্দে সময়ের মধ্যে শিম ও কোকা চাষ, এবং লামা, আলপাকা, ও গিনিপিগ পালনের পাশাপাশি আলু চাষ শুরু হয়। জোয়ার চাষ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে আফ্রিকার সহিল অঞ্চলে।[২]তুলা চাষ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩৬০০ অব্দে পেরুতে। মেসোআমেরিকায় বন্য তিওসিন্তে সম্প্রদায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে ভুট্টা চাষ শুরু করে। উট পালন শুরু হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে।[৩]
মধ্যযুগে ইসলামী বিশ্ব ও ইউরোপ উভয়স্থানে নতুন নতুন পদ্ধতির আবির্ভাবের ফলে কৃষিকাজে পরিবর্তন সাধিত হয় এবং ইউরোপে আন্দালুস-এ শস্য উৎপাদন চিনি, ধান, তুলা, ফলের গাছ যেমন কমলা উৎপাদনে বিস্তৃত হয়। ১৯৪২ সালের পর কলম্বিয়ান এক্সচেঞ্জ আমেরিকা থেকে ইউরোপে নতুন শস্য হিসেবে ভুট্টা, আলু, মিষ্টি আলু ও ম্যানিয়ক এবং পুরোনো শস্যের মধ্যে গম, যব, ধান ও শালগম, ও প্রাণিসম্পদের মধ্যে ঘোড়া, গরু, ভেড়া, ও ছাগল নিয়ে আসে। সেচ, ফসল আবর্তন ও সারনব্য প্রস্তর যুগীয় বিপ্লব'র পরে উদ্ভাবিত হয় এবং তার ২০০ বছর পরে ব্রিটিশ কৃষি বিপ্লব'র পরে তা আরও উন্নতি লাভ করে।
পণ্ডিতগণ কৃষিকাজের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ দাড় করান। তবে বেশিরভাগ পশু শিকার থেকে কৃষি সমাজে পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে থাকেন, বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার ন্যাটুফিয়ান সংস্কৃতি ও চীনের নিউলিথিক বিপ্লব। বর্তমান মতবাদে বলা হয় পূর্বেও শস্যাদি রোপণ করা হত কিন্তু চাষের উদ্দেশ্যে নয়।[৪][৫]
লেভ্যান্ট-এ কৃষিকাজের বিকাশে স্থানীয় জলবায়ুর পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৬] বরফ যুগের পর আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১১,০০০ অব্দে বড় রকমের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান দীর্ঘ সময়ের জন্য শুষ্ক হয়ে পড়ে।[৭] এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব উদ্ভিদ শুষ্ক মৌসুমে মারা যায়, সেগুলোর বীজ মাটিতে সুপ্তাবস্থায় থাকে। এই সময়ে যেসব স্থানে তড়িৎ মজুদকৃত বন্য শস্যাদি ও ডাল জাতীয় উদ্ভিদ পাওয়া যাচ্ছিল, তেমন কিছু এলাকায় পশু শিকারিদের একত্রিত করে এবং প্রথম গ্রাম বা সমাজ গড়ে তোলে।[৮]
পোড়ামাটির তৈরি সুমেরীয় কাস্তে, আনু. খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ
প্রাথমিক যুগ থেকেই মানুষ তাদের সুবিধার জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্র পরিবর্তন করতে থাকে।[৯][১০][১১][১২] এছাড়া মানুষ শস্য সংগ্রহের পরে খেয়ে ফেলা এবং মানুষের হাত ছাড়াই উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হওয়ার ফলে শস্য উৎপত্তির সঠিক সময় নির্ধারণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।[১৩]
দুটি ষাঁড় দিয়ে লাঙ্গল টানারত ভারতীয় কৃষক। প্রাচীনকাল থেকে এই ধরনের লাঙ্গল দিয়েই চাষ করা হত।
কৃষিকাজ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনভাবে শুরু হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রাচীন ও আধুনিক বিশ্বের কমপক্ষে ১১টি অঞ্চল কৃষিকাজের স্বাধীন উৎপত্তির স্থান হিসেবে চিহ্নিত।[১৪] প্রথমদিকে পশুপালন শুরু হয় মেসোপটেমিয়ায়। মেসোপটেমিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ১৩,০০০ অব্দে শূকর পালন করা হত।[১৫] এছাড়া খ্রিস্টপূর্ব ১১,০০০ থেকে ৯০০০ অব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়ায় ভেড়া পালন শুরু হয়।[১৬]গবাদি পশু পালন শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব ৮৫০০ অব্দের দিকে বর্তমান তুরস্ক ও পাকিস্তানে বন্য অরোচ সম্প্রদায়।[১] আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে উট পালন শুরু হয়।[৩]
বৃহৎ তৈজসপত্র বাহিত মাটি ও কাঠের তৈরি গরুর গাড়ি, মহেঞ্জোদাড়ো। খ্রিস্টপূর্ব ১৯শ অব্দে স্থানটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল।
চীনে, ধান ও বাজরা চাষ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দে এবং পরে মুং শিম, সয়াবিন ও আজুকি শিম চাষ শুরু হয়। আফ্রিকারসহিল অঞ্চলে স্থানীয় ধান ও জোয়ার চাষ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে। কাঠ বাদাম ও কফিও আফ্রিকায় চাষ শুরু হয়।[২]নিউ গিনিতে প্রাচীন পাপুয়ান জনগণ খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দে কৃষিকাজ শুরু করে আখ ও তারো চাষের মধ্য দিয়ে। সিন্ধু নদ অববাহিকার মেরগড়ে খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে এইনকর্ন, এমার, দুরুম গম ও খেজুরের পাশাপাশি যব চাষ করা হত। মেরগড়ে প্রাথমিক অবস্থায় খাওয়ার জন্য মায়া হরিণ, জলা হরিণ, কালো হরিণ, চিত্রল হরিণ, বন্য গাধা, বন্য ছাগল, বন্য ভেড়া, দেশি বন শুকর ও নীল গাই শিকার করা হত। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে গৃহপালিত ভেড়া, ছাগল ও ষাঁড়-গরু খাওয়া হত।[২০]ভুট্টা ও কুমড়া মধ্য আমেরিকায়, আলু দক্ষিণ আমেরিকায়, ও সূর্যমুখীউত্তর আমেরিকার পূর্বদিকে চাষ করা হত।[২১]
সুমেরীয় কৃষকেরা খ্রিস্টপূর্ব ৮,০০০ অব্দ সময়কালে যব ও গম জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন করে গ্রামে সমাজ গঠন করে বাস করতে শুরু করে। এই অঞ্চলে নিম্ন বৃষ্টিপাতের কারণে, কৃষি তাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল। নদী থেকে খালের মাধ্যমে সেচের ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা দিয়ে শহরের খাদ্যের চাহিদা দূর করা সম্ভব হয়। প্রথম লাঙ্গল এর ব্যবহার শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দে উরুকে এবং বীজ বপন করার লাঙ্গল যা দিয়ে রেখা টেনে বীজ বপন করা হয় তার ব্যবহার শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ২,৩০০ অব্দ সময়কালে। সবজির মধ্যে ছোলা, ডাল, মটরশুঁটি, শিম, পেঁয়াজ, রসুন, লেটুস, ও সরিষা উৎপাদন হত। ফলের মধ্যে খেজুর, আপেল, তরমুজ, ডুমুর উৎপাদন হত। কৃষিকাজের পাশাপাশি সুমেরীয়রা মাছ ধরত এবং মোরগ ও মৃগ শিকার করত। ভেড়া, ছাগল, গরু ও মুরগীর মাংস খেত, মূলত অভিজাতরা। মাছ শুকিয়ে, লবণ দিয়ে ও ধোঁয়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হত।[২২][২৩]
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নিল নদ এর কাছে ঋণী এবং নদের মৌসুমি বন্যার উপর নির্ভরশীল ছিল। নদের সম্ভাব্যতা ও উর্বর মাটির মিশরীয়দের কৃষি সম্পদের উপর ভিত্তি করে বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সাহায্য করে। খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ থেকে ৪,০০০ অব্দ সময়কালে মিশরীয়রাই প্রথম বৃহৎ পরিসরে কৃষিকাজের চর্চা শুরু করে।[২৪] নদীর অববাহিকায় সেচের উন্নয়নের ফলে তা সম্ভব হয়েছিল।[২৫] মিশরীয়দের প্রধান খাদ্যশস্য ছিল গম ও যব, পাশাপাশি শিল্পশস্য ছিল তিসি ও প্যাপিরাস।[২৪]
↑Hillman, G. C. (1996) "Late Pleistocene changes in wild plant-foods available to hunter-gatherers of the northern Fertile Crescent: Possible preludes to cereal cultivation". In D. R. Harris (ed.) The Origins and Spread of Agriculture and Pastoralism in Eurasia, UCL Books, London, pp.159-203; Sato, Y. (2003) "Origin of rice cultivation in the Yangtze River basin". In Y. Yasuda (ed.) The Origins of Pottery and Agriculture, Roli Books, New Delhi, p. 196
↑Gerritsen, R. (২০০৮)। Australia and the Origins of Agriculture। Archaeopress। পৃষ্ঠা 29–30।
↑Larson, G.; Piperno, D. R.; Allaby, R. G.; Purugganan, M. D.; Andersson, L.; Arroyo-Kalin, M.; Barton, L.; Climer Vigueira, C.; Denham, T.; Dobney, K.; Doust, A.N.; Gepts, P.; Gilbert, M. T. P.; Gremillion, K. J.; Lucas, L.; Lukens, L.; Marshall, F. B.; Olsen, K.M.; Pires, J.C.; Richerson, P.J.; Rubio De Casas, R.; Sanjur, O.I.; Thomas, M.G.; Fuller, D.Q. (২০১৪)। "Current perspectives and the future of domestication studies"। Proceedings of the National Academy of Sciences। 111 (17): 6139। ডিওআই:10.1073/pnas.1323964111।
↑Ladizinsky, G. (1998). Plant Evolution under Domestication. The Netherlands: Kluwer Academic Publishers
↑Mordechai E. Kislev, Anat Hartmann, and Ofer Bar-Yosef, "Early Domesticated Fig in the Jordan Valley," in Science Magazine (June 2, 2006). Vol. 312, No. 5778, pp. 1372-1374. [১]ডিওআই:10.1126/science.1125910
Heiser, Charles B. Seed to Civilization: The Story of Food (W.H. Freeman, 1990)
Herr, Richard, ed. Themes in Rural History of the Western World (Iowa State UP, 1993)
Mazoyer, Marcel, and Laurence Roudart. A History of World Agriculture: From the Neolithic Age to the Current Crisis (Monthly Review Press, 2006) Marxist perspective
Murray, Jacqueline. The First European Agriculture (Edinburgh UP, 1970)
Oka, H-I. Origin of cultivated rice (Elsevier, 2012)
Price, T. D. and A. Gebauer, eds. Last Hunters – First Farmers: New Perspectives on the Prehistoric Transition to Agriculture (1995)
Srivastava, Vinod Chandra, ed. History of Agriculture in India (5 vols 2014) from 2000 BC to present.
Stevens, C. E. "Agriculture and Rural Life in the Later Roman Empire" in Cambridge Economic History of Europe, Vol. I, The Agrarian Life of the Middle Ages (1971)
McNeill, William H. "How the Potato Changed the World's History." Social Research 1999 66#1: 67–83. in JSTOR
Mintz, Sidney. Sweetness and Power: The Place of Sugar in Modern History (Penguin, 1986)
Reader, John. Propitious Esculent: The Potato in World History (Heinemann, 2008) a standard scholarly history
Salaman, Redcliffe N. The History and Social Influence of the Potato, (Cambridge, 2010)
ইউরোপ
Ambrosoli, Mauro. The Wild and the Sown: Botany and Agriculture in Western Europe, 1350–1850 (Cambridge UP, 1997)
Brassley, Paul, Yves Segers, and Leen Van Molle, eds. War, Agriculture, and Food: Rural Europe from the 1930s to the 1950s (Routledge, 2012)
Brown, Jonathan. Agriculture in England: A Survey of Farming, 1870–1947 (Manchester UP, 1987)
Clark, Gregory. "The long march of history: Farm wages, population, and economic growth, England 1209–1869" Economic History Review 60.1 (2007): 97–135. online
Dovring, Folke, ed. Land and labor in Europe in the twentieth century: a comparative survey of recent agrarian history (Springer, 1965)
Yeargin, Billy. North Carolina Tobacco: A History (History Press, 2008)
বহিঃসংযোগ
"The Core Historical Literature of Agriculture" from Cornell University Library; includes 2100 fulltext books and runs of 36 scholarly journals; coverage of agricultural economics, agricultural engineering, animal science, crops and their protection, food science,forestry, human nutrition, rural sociology, and soil science.