শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম(১৯০৪-০১-০৪)৪ জানুয়ারি ১৯০৪
গোবিন্দপুর খুলনা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু৯ অক্টোবর ১৯৯৫(1995-10-09) (বয়স ৯১)
পেশাকৃষি গবেষণা
কর্মজীবন১৯২৫ - ১৯৯৫
পিতা-মাতানিবারণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (পিতা)
সরোজবাসিনী দেবী (মাতা)

শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় (৪ জানুয়ারি ১৯০৪ – ৯ অক্টোবর ১৯৯৫) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কৃষিবিজ্ঞানী। তিনি নিজের একক প্রচেষ্টায় কৃষি গবেষণায় উন্নত কৃষি পণ্যের উৎপাদন করেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাকে নবভারতের বারব্যাঙ্ক নামে আখ্যাত করেন।[]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন খুলনা জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে তার মাতুলালয়ে। পিতা নিবারণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা সরোজবাসিনী দেবী। অল্প বয়সেই শিবপ্রসাদ পিতৃহীন হন। পৈতৃক সম্পত্তি ছিল চব্বিশ পরগনা জেলার বোড়ালে। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রথমদিকে নানা বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় তাকে। বাল্যকাল কাটে খুলনারই গ্রামে। তবে পড়াশোনার জন্য আসেন শ্রীপুর গ্রামে। এই গ্রামের কাছেই ছিল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পৈতৃক বাড়ি। আচার্যের সান্নিধ্য লাভে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। ঘটনাক্রমে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে এক মামলায় তার পরিবার পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পান। ওই বছরেই তিনি খুলনা ছেড়ে বোড়ালে আসেন এবং স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আচার্যের পরামর্শ মত কলা কেউ ইত্যাদির চাষ শুরু করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশের পর পুরোপুরি চাষবাসে মন দেন। আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শিবপ্রসাদ কৃষির সব রকম বিষয় নিয়ে তিনি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়, তিনি তার কৃষি খামার থেকে বীজ সরবরাহ করে কৃষি উৎপাদন সচল রাখতে সহায়তা করেন। বোড়ালের খামারে তার প্রতিষ্ঠিত বোড়াল কৃষিশালায় গাছ নিয়ে তিনি নিত্যনতুন পরীক্ষা চালাতেন, অন্যান্য কৃষকদের দেখাতেন এবং শেখাতেন। প্রয়োজনে তাদের পরামর্শও নিতেন তিনি।

অবদান

শিবপ্রসাদের প্রথম সাফল্য আসে 'বীট' আর 'পালং' -এর সংকর জাত ব্যাণিজিক জায়েন্ট সৃষ্টিতে। মাটির নিচের অংশে 'বিট' আর উপরের অংশ বিশালাকার পাতার 'পালংশাক'। ওজন প্রায় ৮-১০ কিলোগ্রাম। স্বাদও সুস্বাদু। এরপর তার কৃষিশালায় দেখা মিলল 'পলি ফ্লাওয়ার', ব্রেকোলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মিলনে। তার এই পলি ফ্লাওয়ার দেখে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাকে নবভারতের বারব্যাঙ্ক নামে আখ্যাত করেন। শিবপ্রসাদ তার কৃষি খামারে নতুন প্রজাতির চব্বিশটি গোলাপ উৎপাদন করেন। এগুলি 'রোজ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া' এবং 'আমেরিকান রোজ সোসাইটি'-তে নথিভুক্ত হয়েছে। এছাড়াও, তিনি বারো তেরো রকমের সংকর জাতের টমেটো তৈরি করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'টাঙ্গুর' - যা টমেটোর মত মাংসল এবং মিষ্টতায় আঙ্গুর যেমন। একই গাছে নানা ধরনের ফল ও ফল তৈরিতেও তিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

তার আর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল, 'গোলাসার’ বা ‘ফোলিয়ার ফিড’ উৎপাদন। ফলন আশানুরূপ করার জন্য বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি 'গোলাসার' ব্যবহারের পরামর্শ দেন কৃষক ভাইদের। এই সারের ব্যবহারে জল কম লাগে এবং অন্য দিকে ফলন ভালো হয়।

কৃষক ভাইদের সঙ্গে তিনি সরকারি দপ্তরের যোগাযোগ রেখে তাদের জন্য বীজ-সারের ব্যবস্থা করতেন। আচার্য রায়ের নির্দেশে তিনি পরাধীন ভারতে গড়ে তোলেন 'কৃষক সমিতি' আর তারই উদ্যোগে কৃষিমেলা আয়োজন শুরু হয়। সমাজকল্যাণ মূলক বিভিন্ন কাজে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন বোড়ালের প্রাচীন জনপদে।

কৃষিক্ষেত্রের তার অবদানের জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয় সাম্মানিক ডি.এসসি ডিগ্রি প্রদান করে।

জীবনাবসান

আপনভোলা, প্রচারবিমুখ শিবপ্রসাদ কাজের ফাঁকে কবিতা রচনা করতেন। জীবনের শেষদিকে তিনি তার জীবনদর্শনকে কবিতায় বিধৃত করেন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর তিনি প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৮৮,৩৮৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬

Information related to শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

Prefix: a b c d e f g h i j k l m n o p q r s t u v w x y z 0 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Portal di Ensiklopedia Dunia

Kembali kehalaman sebelumnya