লিনাক্স কার্নেল
লিনাক্স কার্নেল (ইংরেজি: Linux Kernel) একটি ওপেন সোর্স মনোলিথিক ইউনিক্স-সদৃশ কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল। লিনাক্স পরিবারের অপারেটিং সিস্টেমগুলো এ কার্নেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহার করে, এবং ঐতিহ্যবাহী কম্পিউটার সিস্টেম যথা-ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং সার্ভার(লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন) হিসাবে,[৫] ও বিভিন্ন এম্বেডেড যন্ত্র যেমন রাউটার, বেতার এক্সেস পয়েন্ট, পিবিএক্স, সেটটপ বক্স, স্মার্ট টিভি উভয়েই লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কার্নেল কর্তৃক সরবরাহকৃত সেবা ব্যবহার করে। যখন ডেস্কটপ কম্পিউটারে এ কার্নেলের ব্যবহারের পরিমাণ স্বল্প, লিনাক্স-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম মোবাইল থেকে মেইনফ্রেমসহ প্রায় কম্পিউটিঙের প্রতিটা বিভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নভেম্বর ২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], সবচেয়ে শক্তিশালী ৫০০টি সুপারকম্পিউটারের সবগুলোই লিনাক্স ব্যবহার করে। নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্যে কোন প্রকার আন্তঃপ্ল্যাটফরম উদ্দেশ্য ছাড়াই লিনাস টরভল্ডস কর্তৃক ১৯৯১ সালে প্রথম লিনাক্স কার্নেল নির্মিত হয়।[৬] কিন্তু সে সময় থেকে এটি বিশাল সংখ্যার কম্পিউটার স্থাপত্যকে সাপোর্ট দিয়ে এসেছে, এ সংখ্যা যেকোন কার্নেল বা অপারেটিং সিস্টেম থেকে বেশি। ডেভলপার ও ব্যবহারকারীদের লিনাক্স কার্নেল আকর্ষণ করতে লাগলো, যারা পরবর্তীতে এটিকে অন্যান্য ফ্রি সফটওয়্যার প্রকল্পের, উল্লেখযোগ্যভাবে গ্নু অপারেটিং সিস্টেমের, ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছে। লিনাক্স কার্নেল প্রায় ১,২০০ কোম্পানি থেকে ১২,০০০ ডেভলপারের অবদানে গড়ে উঠেছে।[৭][৮] লিনাক্স কার্নেল এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস, যেটার মাধ্যমে ব্যবহারকারী প্রোগ্রাম কার্নেলের সাথে যোগাযোগ করে, বেশ স্টেবল হতে হয় যাতে ইউজারস্পেস প্রোগ্রাম না ভাঙ্গে। কার্নেলের ফাংশনালিটির অংশ হিসাবে, ডিভাইস ড্রাইভার হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করে, এবং মেইনলাইন্ড ডিভাইস ড্রাইভারও বেশ স্টেবল হয়। যাইহোক, কার্নেল এবং লোডেবল কার্নেল মড্যুলের(এল.কে.এম.) মধ্যকার ইন্টারফেস অন্যান্য সব অপারেটিং সিস্টেম ও কার্নেলের মত ডিজাইনে অত বেশি স্টেবল হয় না।[৯] বিশ্বব্যাপী একঝাঁক ডেভলপার কর্তৃক উন্নয়নকৃত লিনাক্স কার্নেল ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের একটা জ্বলন্ত উদাহরণ,[১০] এবং এটা ৬ বছরের অধিক ধরে সাপোর্ট করা হয়। লিনাক্স কার্নেল মেইলিং লিস্ট(এলকেএমএল)-এ দৈনন্দিন ডেভেলপমেন্ট আলোচনা হয়। লিনাক্স কার্নেল গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স ২য় সংস্করণের অধীনে নিবন্ধিত হয়েছে। ইতিহাসএপ্রিল ১৯৯১ সালে, লিনাস টরভল্ডস যখন হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ বছর বয়সী কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র, একটি অপারেটিং সিস্টেমের জন্য খুব সাধারণ কিছু আইডিয়া নিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। ইনটেল ৮০৩৮৬ এসেম্ভলি ভাষায় একটি টাস্ক সুইচার ও একটি টার্মিনাল ড্রাইভার দিয়ে শুরু করলেন কাজ। এরপরে অনেকগুলো লোক এ প্রকল্পের কোডে অবদান রাখেন। প্রথমদিকে মিনিক্স কম্যুনিটি লিনাক্স কার্নেলে তাদের কোড ও ধারণা রাখেন। সেসময়ে গ্নু প্রকল্প এমন কিছু উপাদান সৃষ্টি করেছিলো যা একটি ফ্রি অপারেটিং সিস্টেমের জন্যে প্রয়োজন, কিন্তু তাদের নিজস্ব কার্নেল গ্নু হার্ডও ছিলো অপূর্ণ ও অনুপস্থিত। বিএসডি অপারেটিং সিস্টেম তখনও নিজেদের আইনি দায় থেকে মুক্ত করতে পারেনি। পূর্ববর্তী সংস্করণসমূহের সীমাবদ্ধ কার্যকারিতা সত্তেও লিনাক্স দ্রুত উন্নয়নকারী ও ব্যবহারকারী অর্জন করে। সেপ্টেম্বর ১৯৯১ এর দিকে ফিনীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা নেটওয়ার্কের এফটিপি সার্ভারে (ftp.funet.fi) লিনাক্স কার্নেলের সংস্করণ ০.০১ মুক্তি ফেলো। এর সর্বমোট ১০,২৩৯ লাইন সোর্স কোড ছিলো। ৫ অক্টোনর ১৯৯১ সালে লিনাক্স কার্নেল সংস্করণ ০.০২ বের হলো।[১১] ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে লিনাক্স কার্নেল সংস্করণ ০.১১ মুক্তি পেলো। এটিই ছিলো প্রথম সেলফ হোস্টকৃত সংস্করণ যেহেতু এটি একই কার্নেল সংস্করণ চলা কম্পিউটার কর্তৃক কম্পাইল করা যেতো। যখন তোরভালদস সংস্করণ ০.১২ মুক্তি দিলেন, তিনি নিজের বানানো লাইসেন্সের বদলে গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স (জিপিএল) গ্রহণ করলেন, তবে বাণিজ্যিক পুনঃবিতরণ ছিলো অননুমোদিত।[১২] ১৯ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে সংবাদগোষ্ঠী alt.os.linux -এ প্রথম পোস্ট দাখিল করা হলো। ৩১ মার্চ ১৯৯২ সালে সংবাদগোষ্ঠীটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় comp.os.linux। এক্স উইন্ডো সিস্টেম লিনাক্সে পোর্ট করা হলো, তাই লিনাক্স সংস্করণ ০.৯৫ ছিলো এক্স চালাতে সক্ষম প্রথম লিনাক্স সংস্করণ। ০.১x সংস্করণ ক্রম থেকে ০.৯x এ চলে যাওয়ায় ১.০ সংস্করণ আসন্ন বলে ধারণা করছিলো অনেকে। তবে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত করে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ০.৯৯ সংস্করণের ১৫টি উন্নয়ন সংস্করণ মুক্তি পায়। ১৪ মার্চ ১৯৯৪ সালে ১,৭৬,২৫০ লাইন কোডসমেত লিনাক্স কার্নেল ১.০.০ মুক্তি পায়। মার্চ ১৯৯৫ সালে লিনাক্স কার্নেল ১.২.০ মুক্তি পায় ৩,১০,৯৫০ লাইন কোড নিয়ে। লিনাক্সের ২য় সংস্করণ ৯ জুন ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায়। এর অনুসরণে আরও দুটো প্রধান সংস্করণ ২ শিরোনামের অধীনে বের হয়:
২০০৪ সাল থেকে মুক্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসলো। নতুন কার্নেল নিয়মিত ২-৩ মাসের অনুসূচীতে আসতে লাগলো, ২.৬.০, ২.৬.১ এভাবে ২.৬.৩৯ পর্যন্ত। ২১ জুলাই ২০১১ সালে তোরভাল্দ্স ৩.০ সংস্করণের ঘোষণা দেন:"Gone are the 2.6.<bignum> days"। ২.৬.৩৯ থেকে এটি কোন উল্লেখযোগ্য টেকনিকেল উন্নয়ন নয়, বরঞ্চ এটি লিনাক্সের ২০তম বার্ষিকীকে স্মরণ করে মুক্তি পেয়েছে। সমউ-ভিত্তিক মুক্তি প্রক্রিয়া অব্যহত থাকলো। সংস্করণ ৪.১ মুক্তি পেলো জুন ২০১৫ সালে, ১৪,০০০ উন্নয়নকারীর অবদানে ১৯৫ কোটি লাইন কোড সহ। ট্যানেবাওম-তোরভাল্দ্স বিতর্কমিনিক্সের স্রষ্টা অ্যানড্রিউ এস. ট্যানেবাওম ও তোরভালদসের বিতর্কের বিষয় ছিলো, লিনাক্স মাইক্রোকার্নেল না হয়ে মনোলিথিক কার্নেল কেন। [১৩] বিতর্কেত শুরু হয় ১৯৯২ সালে ইউজনেট আলোচনা গ্রুপ জনপ্রিয়তালিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করা অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তা এটাকে মোবাইল যন্ত্রের জন্যে জনপ্রিয় নির্বাচনে পরিণত করে।[১৫] পূর্ববর্তী বছরসমূহ সহ ২০১৪ সালে সর্বমোট তিনশো কোটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। অনেক ভোক্তা রাউটার, গ্রথিত যন্ত্র স্মার্ট টিভি, সেট-টপ বক্স এবং ওয়েবক্যাম লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে। অনেকগুলো ডেস্কটপ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন থাকলেও ব্যবহারকারী অংশ অন্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় কম। বহনযোগ্যতা![]() বহনযোগ্য হওয়ার জন্যে ডিজাইন না করা হলেও লিনাক্স সবচেয়ে বেশি পোর্ট করা অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল। আইবিএম জিন ও চিনের সবচেয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটার লিনাক্সে চলে। ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের প্রথম ৫০০ দ্রুতগতির কম্পিউটার লিনাক্সের কোন না কোন সংস্করণে চলে। অ্যাপলের আইফোন-আইপডের মত যন্ত্রেও লিনাক্স পোর্ট হয়েছে। কিছু মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তিত লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে। এ দলে আছে অ্যান্ড্রয়েড, ফায়ারফক্স ওএস, নকিয়া মায়েমো, এইচপি ওয়েবওএস, জোলা সেইলফিশ ওএস। তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ![]() উইকিবইয়ে Linux kernel বিষয়ের উপরে একটি পাতা রয়েছে: লিনাক্স কার্নেল ![]() উইকিমিডিয়া কমন্সে লিনাক্স কার্নেল সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। Information related to লিনাক্স কার্নেল |
Portal di Ensiklopedia Dunia